Welcome to Chakrihub.
জ্ঞানের বিশ্বায়ন- জানা আবশ্যক, জানানো দায়বদ্ধতা
জ্ঞানের বিশ্বায়ন- জানা আবশ্যক, জানানো দায়বদ্ধতা
February 26 at 1:28 PM ·
হায়রে কাশ্মীর!- না ঘরকা, না ঘাটকা
=========================
.
★ ১৯৪৭ সালে পৃথিবী নামক গ্রহে ভারত-পাকিস্তান নামে দু সতীনের জন্ম হয়। জন্মের সময় থেকেই দু সতীনের অনেকগুলো বিষয়ের প্রতি ভালভাগা সৃষ্টি হয়। কাকতালীয় ভাবে হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে উভয়েরই পছন্দ একই ধরণের “নিখর্ব মোহন মণি কাঞ্চন”। যেমন- পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ খ্যাত কাশ্মীর । যদি এই কাশ্মীর স্বাধীন রাষ্ট্র হত, কূটনীতির ভাষায় এটাকে বলা হত বাফার স্টেট (অর্থাৎ দুটি শক্তিশালী জন্তুর ঘাত-প্রতিঘাতে দিশেহারা তৃতীয় পক্ষ)।
★ ১৯৪৭ সালে রাজা হরি সিং নামে একজন ব্যক্তি ছিলেন কাশ্মীরের ভূ-স্বামী। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান হওয়ায় পাকিস্তানের ছিল এ অংশে যেমন লোলুপ দৃষ্টি তেমনি ভারতেরও ছিল সুন্দরী বধূকে কাছে পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। তবে সাধারণ মানুষগুলোর চিন্তা ছিল ভিন্ন । মজার বিষয় হলো, এই হরি সিং জি তার অধীনস্তদের মতামত তোয়াক্কা না করে ভারতীয় সেনাদের সাহায্য পাবার আশায় ভারতে যোগদান করেন। জানেন তো, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতেই বরকত বেশী। এক্ষেত্রে, রাজা রাজত্ব হারালো ঠিকই তবে অধিকাংশ প্রজারা হারাতে চাইলো না তাদের স্বকীয়তা।
★রাজা হরি সিং এর ভারতে যোগদানের বিষয়টি ভাল চোখে দেখলনা পাকিস্তান ও চীন। আর তাই, ভারত ও পাকিস্তানের কেউই চায়না কাশ্মীরকে হাতছাড়া করতে। অন্যদিকে, কাশ্মীরের সাদা মনের মানুষগুলোও চায়না দু কাঙ্গালের সাথে থাকতে। তাই ওদের সর্বাধিক কাম্য স্বাধীনতা নামক দুর্লভ বস্তু। এ কারণে মুক্তিকামী মানুষেরা জোট বাধে; আলাদা হতে চায় শক্তিশালী শক্তিদ্বয়ের কবল থেকে; একটু শান্তি পাবার প্রত্যাশায়। এই মুক্তিকামী মানুষগুলোকে আমরা যারা সভ্য তাঁরা সন্ত্রাসী বলি (যেরূপে আমাদের ক্ষুদিরাম, তিতুমীর, শরিয়তউল্লাহ, ইলা মিত্র, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মুক্তিকামী বাঙ্গালীকে অতীতে সন্ত্রাসীর উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল)।
.
★ ভারত সমগ্র জম্মুর বেশিরভাগ অংশ, কাশ্মীর উপত্যকা, লাডাখ এবং সিয়াচেন হিমবাহ নিয়ে প্রায় ৪৩% অঞ্চল শাসন করছে। আরেক কাঙ্গাল পাকিস্তান কাশ্মীরের ৩৭% নিয়ন্ত্রণ করে- এর মধ্যে আছে আজাদ কাশ্মীর এবং গিলগিট বাল্টিস্থানের উত্তরাঞ্চল। মাঝখানে ভাগ বসাতে আসে আরেক বিশ্বশক্তি – চীন। তাই লাডাখের একটা অংশ চীনের কবজায় রয়েছে।
★ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধ হয় ১৯৪৭, ১৯৬৫ সালে। ১৯৬৬ সালের ১০ ই জানুয়ারী তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে সে যুদ্ধের নিষ্পত্তি হয়। তাসত্ত্বেও ১৯৯৯-এ আরেকটি বাহাদুরি দেখে বিশ্ববাসী। এখনও চলছেই টম এন্ড জেরি মত লুকোচুরি খেলা। লাডাখ নিয়ে চীনের সাথেও ভারতের ধ্বস্তাধস্তি দেখেছে সভ্য বিশ্ব।
★ পরাশক্তিরা টোপ ফেলে। উদীয়মানরা টোপ গেলে। একবার সোভিয়েত আফগানদের উপর হস্তক্ষেপ করলে পাকিস্তান আফগানদের সহযোগিতা করে – এ সুযোগে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের সাথে একটি ভাল সম্পর্কের ভিত্তিতে ভারতকে পারমানবিক অস্ত্র নির্মাণে সহযোগিতা করে। সেবার পাকিস্তান চীনের সহযোগিতায় পারমানবিক অস্ত্রের মোকাবিলা করে । দু দেশের পরস্পারিক ঘৃণা প্রবল হওয়ায় ১৯৯৯ সালের দিকে পাকিস্তানও পারমাণবিক শক্তির মালিক হয়। তারপর দ্রুত ভয়ানক এ অস্ত্রের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে থাকে। এক একটি অস্ত্র তৈরিতে যে পরিমান অর্থ খরচ হয়েছে যা দ্বারা দুটি দেশের অসংখ্য দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের দুর্দশা দূর করা যেতে পারত। প্রতিবেশী এ দু রাষ্ট্রের অসুস্থ কীর্তি দেখে বিশ্ব নেতারা দাঁত বের করে অট্টহাসিতে গড়াগড়ি দেয়।
★ ২০০২ সাল ছিল কাশ্মীর নিয়ে পাক- ভারতের অস্তিরতার সময়। দুই দেশের মধ্যে হতাহতের ঘটনায় অনেক নিরীহ কাশ্মীরি নিহত হয় যার পরিপ্রেক্ষিতে কাশ্মীরের জনগন আজও এই দিনটিকে শোক দিবস হিসেবে পালন করে। দুই দেশের এই অভ্যন্তরীণ সমস্যা সে সময় বৃটেনের হস্তক্ষেপে সাময়িক সমাধান হয়। ২০০৩ সালে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি চুক্তির মাধ্যমে অনেক দিন থেকে এই দুই দেশের মধ্য শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল। তবে কাশ্মীরে যেন সমস্যার বাজার স্থাপন করা হয়েছে। জম্বু এবং আজাদী কাশ্মীর এই দুটির মাঝখানে অবস্থিত লাইন অব কন্ট্রোল নামে আরেকটা বৃহৎ সমস্যা বিদ্যমান। লাইন অব কন্ট্রোলের দুই পার্শ্বে কোটি কোটি মানুষ বসবাস করছে, এই কোটি প্রাণকে ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে দুই দেশের শাসক গোষ্ঠি একপক্ষ কাশ্মীরকে নিজেদের দখলে রেখে অন্য পক্ষ দখলের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে দশকের পর দশক। বর্তমান বিশ্বে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল ছাড়া আর কোন দেশ পাওয়া যাবেনা, যারা ভারত পাকিস্তানের মতো পরস্পর পরস্পরকে ঘৃণা করে। আর এই ঘৃণার গিনিপিগ যেন কাশ্মীরবাসী।
★ ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব বা ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে গোলাগুলি ও রক্তপাতের ঘটনা কাশ্মীর-এর জন্য অভিশাপ। গত এক বছরে এ অবস্থা অনেক বেড়ে গেছে। ২ নভেম্বর,২০১৫ ইং তারিখে সীমান্তে গোলাগুলিতে বোনাদিপাড়া জেলায় ভারতীয় দুই সৈন্যের প্রাণ যায়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে কাশ্মীরের উধমপুরে ট্রাকচালক জাহিদ আহমাদকে গরু জবাই করার অভিযোগে পেট্রলবোমা ছুড়ে হত্যা করা হয়। কাশ্মীরের জাইনকোট-এ ৭ নভেম্বর ভারতীয় সিপিআরএফ সেনাদের ছোড়া টিয়ার শেলের আঘাতে এক যুবকের মৃত্যুর তিন দিন পরও উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ অব্যাহত ছিল। হত্যার বিচার চেয়ে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। ওই যুবক হত্যার দিনই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীর সফরে যান। এ সময় শ্রীনগরে এক জনসভায় তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য ৮০ হাজার কোটি রুপি সহায়তা ঘোষণা দেন। এরপরই কাশ্মীরের রাস্তায় বিক্ষোভ চলাকালে ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে এক কিশোরের মৃত্যু হয়।
একই কারণে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ জম্মু কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদ-এ বিক্ষোভ হয়। সেখানে মোদিকে ‘ইসলামের শত্রু’ বলে সম্বোধন করা হয়। কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সমালোচনা করে বলেছিলেন, অন্য সরকারের মতো মোদিও ‘রুপী ও পয়সা’ দিয়ে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন।
.
★ উরি, পুলওয়ালা হামলার ঘটনায় নিহত হয় ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষী। প্রশ্ন হলো, এটা কী কাশ্মীরিদের ক্ষোভ থেকে আক্রমণ নাকি কাশ্মীরের জনগণের ভারত বিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী আক্রমণ?
★ পৃথিবীতে কয়টা দেশ এ দুদেশের চেয়ে বড়? কয়টা দেশের আয়তন ভারতের মত ৩,১৬৬,৪১৪ বর্গকিলোমিটার (হয়তো ৬ টা) বা পাকিস্তানের মত ৮৮০,২৫৪ (হয় তো ৩৫ টা) বর্গকিলোমিটার? তবু কেন কাশ্মীরকে বাদ দিয়ে ভাবা যাবে না? যেখানে ১৫৭ টা (পাকিস্তানের চেয়ে) বা ১৮৭ টা (ভারতের চেয়ে) স্বাধীন দেশের আয়তনই এ দুদেশের চেয়ে কম! তাহলে কি এ দু-দেশের চাওয়ার মতো কোন কিছুর জন্যই কবিগুরুর আক্ষেপ—
.
“এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি।”
.
এটাই একমাত্র ঠিক, আর দুনিয়ার সব কিছুই ভুল?
জাকির বিসিএস স্পেশাল থেকে।